এম কামরুজ্জামান,শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃসাতক্ষীরার শ্যামনগরে ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে পরপারে চলে গেলেন পাগলী রিজিয়া সুলতানা।
গত ১৪ সালের কথা,তখন বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি চক্র জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে।সেই সময় রিজিয়া সুলতানা নামের এক পাগলী শ্যামনগর সদরের নকিপুর গ্রামে প্রয়াত প্রভাসরঞ্জন রায়ের বাড়ির সামনের রাস্তায় আশ্রয় গ্রহণ করে।গরম, শীত, বর্ষা রাস্তার উপর বসেই তার সময় কাটে।কেউ কিছু দিলে খেতো না। মুখে তুলে খাদ্য খাওয়ার ক্ষমতা তার নেই। এ সময়ে দেবদূতের মত হাজির হলেন প্রভাষ বাবুর ছেলে মোহনলাল রায়।আমরা যাকে মোহনলাল দাদা বলে ডাকি। পরম যত্নে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ রিজিয়া পাগলিকে খাওয়াতেন তিনি। রাস্তার পাশে পলিথিন দিয়ে একটি ঘর বানিয়ে সেখানে রিজিয়ার থাকার ব্যবস্থা করলেন তিনি। এরপর তাকে নিজের সন্তানের মত প্রতিপালন করা শুরু করলেন। প্রতিদিন তিন বেলা গালে তুলে খাওয়াতেন। সেই রিজিয়া পাগলি ২০ ফেব্রুয়ারী রবিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে গেল।
সাত বছরের অধিক সময় পরম যত্নে আগলে রাখা এই মানুষটির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নকিপুর জমিদারবাড়ি সরকারি গোরস্থানে তার শেষ ঠিকানা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ মোহনলাল দাদা একজন মুসলিম পাগলীর জন্যে যে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এটি বর্তমান সমাজে বিরল। পাগলি রিজিয়ার শোকে ভেঙে পড়েছে মোহনলাল দাদা।অনবরত ক্রন্দন করছেন তিনি।রিজিয়ার পাশে অনেকেই দাঁড়িয়েছেন।সাতক্ষীরা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার,তার ছোটভাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু অধিকাংশ সময় তার খোঁজখবর নিতেন।বেশ কিছুদিন আগে থেকে পাগলী রিজিয়া বলতো তার বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাপুরে।মাঝেমধ্যে বলতো মাইজদা হাজিরহাট চৌরাস্তা মোড়ে। বাবার কথা শুনলে বলতো জামানের বাপ,মা শাকেরা খাতুন। আমরা অনেকেই ধর্ম নিয়ে বিভেদ ছড়াই। কিন্তু মানুষের ধর্ম হৃদয়ে। মোহনলাল দাদা একজন হিন্দু হয়েও একজন মুসলমানের জন্য তার যে আত্মত্যাগ এটিকে আমরা কিভাবে বিশ্লেষণ করবো। আল্লাহর সৃষ্টি জীব মানুষকে ভালোবাসা পরম ধর্ম।ধর্ম দিয়ে নয় মানবিকতা দিয়ে আমরা মানুষকে ভালবাসতে শিখি। ভালবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মোহনলাল রায়।স্যালুট মোহনলাল রায় কে। আপনাদের জন্যই পৃথিবীটি এত সুন্দর
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply